কিডনি ড্যামেজ হলে করণীয়

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. রাইসুর আক্তার :সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। তার মধ্যে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তত্ত্ব মতে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এ কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। তারমধ্যে কিডনি সিস্ট, কিডনি পাথর, একিউট কিডনি ডিজিস, র‍্যাপিডলি ইনক্রিজড কিডনি ডিজিজ, ক্রনিক কিডনি ডিজিস, ইত্যাদি সমস্যা অন্যতম।

কিডনি ডিজিজের লক্ষণ সমূহ:

১. ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতা।

 

২. বমি বমি ভাব ও বমি।

 

৩. পেট ও মাজা ব্যথা।

 

৪. মূত্রকৃচ্ছতা অথবা প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়া।

 

৫. হাইপারটেনশন অর্থাৎ হাই প্রেসার হয়ে যাওয়া।

 

৬. পায়ের দিকে অথবা পুরো শরীর ফুলে যাওয়া।

 

৭. শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া।

 

৮. প্রস্রাব পরিমাণে কমে যাওয়া।

 

৯. প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া অথবা ঘোলাটে ধরণের প্রস্রাব হওয়া।

 

১০. দুর্গন্ধ প্রস্রাব হওয়া।

 

১১. সাথে জ্বর থাকতে পারে।

কিডনি ড্যামেজ এর কারণ সমূহ:

১. যদি কোন পেশেন্ট দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন, তবে অতিরিক্ত রক্তের শর্করা থাকার কারণে কিডনির ফিল্টার ইউনিটগুলো এই শর্করা ফিন্টার করতে করতে এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত বা অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই ডায়াবেটিস কে কিডনি ড্যামেজে অন্যতম কারণ বলে গণ্য করা হয়।

 

২. যদি প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হয় তাহলেও কিডনির ফিলটার ইউনিটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যেমন প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি, কিডনিতে পাথর, কিডনিতে সিস্ট, ইত্যাদি কারণবশত প্রস্রাব নিঃসরণ না হলে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে।

 

৩. যদি কারো প্রেসার হাই থাকে তাহলে নেফ্রনগুলোর উপরে প্রচণ্ড চাপ পড়ে কারণ কিডনি প্রতিদিন প্রায়ই ১৭৬ লিটার ব্লাড ফিল্টার করে তা থেকে দেড় থেকে ২ লিটার প্রস্রাব প্রোডাকশন করে। যদি রক্তের অতিরিক্ত ফ্লুইড থাকে তবে কিডনি এই ফিল্টারের ক্ষমতা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে তখন সরাসরি প্রস্রাবের সাথে এই ব্লাড আসতে শুরু করে এবং কিডনি ড্যামেজ হতে শুরু করে।

 

৪. বিভিন্ন কারণে শরীরে যখন মারাত্মক ইনফেকশন হয় তখন কিডনি দ্রুত ব্লাড ফিল্টার করে সেই বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু শরীরে মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ থাকার কারণে কিডনি আস্তে আস্তে ড্যামেজ হতে শুরু করে এবং ওই বর্জ্য পদার্থগুলো শরীরের চর্মরোগের সৃষ্টি করে কারণ তখন শরীরে ফসফরসের পরিমাণ বেড়ে যায়।

 

৫. আবার এই শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন অর্থাৎ বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনিদ্রা চলে আসে সে ক্ষেত্রে কিডনি ড্যামেজ এর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

৬. অনিয়মিত অযাচিত এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যথার বড়ি খেলে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে এইজন্য ভালো কোন ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হয়ে যেকোনো ওষুধ খাওয়া উচিত।

৭. ধূমপান মদ্যপান বা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন কিডনি ড্যামেজের একটি অন্যতম কারণ।

৮. অতিরিক্ত ওজনও কিডনি ড্যামেজের জন্য দায়ী।

প্রতিকার:

> ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

> দৈনিক অন্তত তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা।

> হাই প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

> নিয়মিত অন্তত আধা ঘণ্টা শরীর চর্চা করা।

> প্রতিরাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুমানো।

> ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।

> সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।

> ধূমপান বা মদ্যপান না করা।

> পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করা।

> শরীরে যে কোন জায়গায় ইনফেকশন অথবা জ্বর হলে একজন অভিজ্ঞ ফিজিশিয়ানের সাথে দেখা করা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা।

> অনিয়ন্ত্রিত অযাচিত বা অযথা ব্যথার ঔষধ বা অন্যান্য ঔষধ গ্রহণ না করা।

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট ও গবেষক। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সংস্কারবিহীন কোনো নির্বাচন জামায়াত গ্রহণ করবে না: তাহের

» ৪৮তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা ১৮ জুলাই

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ৮১১ জন আসামি গ্রেফতার

» নির্বাচনী বাজেটে কোনো কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

» ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি বৃত্তি’ চালু করল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

» জুলাই শহীদদের স্মরণে গণসংহতির শ্রদ্ধা, সরকারকে সতর্ক করলেন সাকি

» ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

» ১৬ বছর অপেক্ষা নয়, প্রতিবছর অভ্যুত্থান স্মরণের অঙ্গীকার

» জুলাই গণহত্যা : শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামির পক্ষে শুনানি সোমবার

» ‘জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কিডনি ড্যামেজ হলে করণীয়

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. রাইসুর আক্তার :সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। তার মধ্যে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তত্ত্ব মতে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এ কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। তারমধ্যে কিডনি সিস্ট, কিডনি পাথর, একিউট কিডনি ডিজিস, র‍্যাপিডলি ইনক্রিজড কিডনি ডিজিজ, ক্রনিক কিডনি ডিজিস, ইত্যাদি সমস্যা অন্যতম।

কিডনি ডিজিজের লক্ষণ সমূহ:

১. ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতা।

 

২. বমি বমি ভাব ও বমি।

 

৩. পেট ও মাজা ব্যথা।

 

৪. মূত্রকৃচ্ছতা অথবা প্রস্রাব ক্লিয়ার না হওয়া।

 

৫. হাইপারটেনশন অর্থাৎ হাই প্রেসার হয়ে যাওয়া।

 

৬. পায়ের দিকে অথবা পুরো শরীর ফুলে যাওয়া।

 

৭. শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া।

 

৮. প্রস্রাব পরিমাণে কমে যাওয়া।

 

৯. প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া অথবা ঘোলাটে ধরণের প্রস্রাব হওয়া।

 

১০. দুর্গন্ধ প্রস্রাব হওয়া।

 

১১. সাথে জ্বর থাকতে পারে।

কিডনি ড্যামেজ এর কারণ সমূহ:

১. যদি কোন পেশেন্ট দীর্ঘদিন যাবত ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন, তবে অতিরিক্ত রক্তের শর্করা থাকার কারণে কিডনির ফিল্টার ইউনিটগুলো এই শর্করা ফিন্টার করতে করতে এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত বা অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই ডায়াবেটিস কে কিডনি ড্যামেজে অন্যতম কারণ বলে গণ্য করা হয়।

 

২. যদি প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হয় তাহলেও কিডনির ফিলটার ইউনিটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যেমন প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি, কিডনিতে পাথর, কিডনিতে সিস্ট, ইত্যাদি কারণবশত প্রস্রাব নিঃসরণ না হলে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে।

 

৩. যদি কারো প্রেসার হাই থাকে তাহলে নেফ্রনগুলোর উপরে প্রচণ্ড চাপ পড়ে কারণ কিডনি প্রতিদিন প্রায়ই ১৭৬ লিটার ব্লাড ফিল্টার করে তা থেকে দেড় থেকে ২ লিটার প্রস্রাব প্রোডাকশন করে। যদি রক্তের অতিরিক্ত ফ্লুইড থাকে তবে কিডনি এই ফিল্টারের ক্ষমতা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে তখন সরাসরি প্রস্রাবের সাথে এই ব্লাড আসতে শুরু করে এবং কিডনি ড্যামেজ হতে শুরু করে।

 

৪. বিভিন্ন কারণে শরীরে যখন মারাত্মক ইনফেকশন হয় তখন কিডনি দ্রুত ব্লাড ফিল্টার করে সেই বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু শরীরে মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ থাকার কারণে কিডনি আস্তে আস্তে ড্যামেজ হতে শুরু করে এবং ওই বর্জ্য পদার্থগুলো শরীরের চর্মরোগের সৃষ্টি করে কারণ তখন শরীরে ফসফরসের পরিমাণ বেড়ে যায়।

 

৫. আবার এই শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন অর্থাৎ বর্জ্য পদার্থ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনিদ্রা চলে আসে সে ক্ষেত্রে কিডনি ড্যামেজ এর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

৬. অনিয়মিত অযাচিত এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যথার বড়ি খেলে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে এইজন্য ভালো কোন ফিজিশিয়ানের শরণাপন্ন হয়ে যেকোনো ওষুধ খাওয়া উচিত।

৭. ধূমপান মদ্যপান বা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন কিডনি ড্যামেজের একটি অন্যতম কারণ।

৮. অতিরিক্ত ওজনও কিডনি ড্যামেজের জন্য দায়ী।

প্রতিকার:

> ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

> দৈনিক অন্তত তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা।

> হাই প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

> নিয়মিত অন্তত আধা ঘণ্টা শরীর চর্চা করা।

> প্রতিরাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা ঘুমানো।

> ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।

> সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।

> ধূমপান বা মদ্যপান না করা।

> পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করা।

> শরীরে যে কোন জায়গায় ইনফেকশন অথবা জ্বর হলে একজন অভিজ্ঞ ফিজিশিয়ানের সাথে দেখা করা ও চিকিৎসা গ্রহণ করা।

> অনিয়ন্ত্রিত অযাচিত বা অযথা ব্যথার ঔষধ বা অন্যান্য ঔষধ গ্রহণ না করা।

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট ও গবেষক। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com